বর্তমান প্রযুক্তির যুগে, আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, অনলাইনে কেনাকাটা করি, ব্যাংকিং ট্রান্সজেকশন করি এবং ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে সংরক্ষণ করে থাকি। কিন্তু এই ডিজিটাল জীবনযাত্রার মধ্যে বড় একটি ঝুঁকিও রয়েছে, যা হলো সাইবার নিরাপত্তা, যাকে বলা হয়, Cyber Security.., ইন্টারনেটে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংকিং ডিটেলস, পাসওয়ার্ড এবং আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে, যা হ্যাকাররা চুরি করতে পারে। তাই সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে জানা ও শিখা আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত জরুরি।
আজকে আমরা জানবো...,
সাইবার সিকিউরিটি কী?
কেন সাইবার সিকিউরিটি গুরুত্বপূর্ণ?
কীভাবে হ্যাকিং হয়?
কিভাবে সাইবার আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকা যায়?
কীভাবে সাইবার সিকিউরিটি শিখতে হয়?
চলুন জেনে নেয়া যাক।
সাইবার সিকিউরিটি কী?
সাইবার সিকিউরিটি হলো কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক, সফটওয়্যার এবং ডেটাকে সুরক্ষিত রাখার কৌশল, এটি আমাদের অনলাইন তথ্য ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে, সাইবার সিকিউরিটির মাধ্যমে আমরা হ্যাকিং, ডাটা ব্রিচ, ম্যালওয়্যার, ভাইরাস, এবং অন্যান্য ডিজিটাল আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
সাইবার সিকিউরিটিকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে..!
১/ নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি, যেটা নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করে।
২/ ইনফরমেশন সিকিউরিটি, তথ্য ও ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত রাখে।
৩/ অ্যাপ্লিকেশন সিকিউরিটি, সফটওয়্যার বা অ্যাপের দুর্বলতা খুঁজে বের করে, তা দূর করে।
কেন সাইবার সিকিউরিটি গুরুত্বপূর্ণ?
১/ ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে, আমরা ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করি, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলে থাকি, ব্যাংকিং তথ্য দিই। যদি এগুলো ঠিকমতো সুরক্ষিত না থাকে, তবে হ্যাকাররা সেগুলো চুরি করতে পারে এবং আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার করতে পারে, যা আমাদের জন্য হুমকি হতে পারে।
২/ হ্যাকিং প্রতিরোধ করতে, বিভিন্ন উপায়ে আমাদের একাউন্ট হ্যাক করতে পারে, যেমন ফিশিং, মালওয়্যার, স্ক্যাম ইমেইল ইত্যাদিসহ, সাইবার সিকিউরিটি শিখলে আমরা এগুলো থেকে বাঁচতে পারবো।
৩/ অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে, অনলাইনে অনেকেই ফ্রড ট্রান্সজেকশন, ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং, ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক ইত্যাদির শিকার হয়ে থাকে, যদি আমরা সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে জানি, তবে এই ধরনের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে আমাদের সহায়তা হবে।
৪/ প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, অনেক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি অনলাইনে ডাটা সংরক্ষণ করে থাকে, যদি সেগুলো ঠিকমতো সুরক্ষিত না করে থাকে, তাহলে হ্যাকাররা সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করতে পারে, যা ব্যবসার জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৫/ ডিজিটাল সুরক্ষা নিশ্চিত করা, কেননা বর্তমানে সবকিছু ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে, গভর্নমেন্ট ডাটা, স্বাস্থ্যসেবা ডাটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডাটা, ইত্যাদি, এগুলো এখন অনলাইনে সংরক্ষণ করা হয়।
আর যদি এগুলো সুরক্ষিত না থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে, যা আমাদের জন্য বিপজ্জনক।
যেভাবে হ্যাকিং করা হয় তাহলো, হ্যাকাররা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে আমাদের তথ্য চুরি করে থাকে, যেগুলোর মাধ্যমে হ্যাকিং হয়ে থাকে?
১/ ফিশিং (Phishing), এটি একটি জনপ্রিয় হ্যাকিং পদ্ধতি, যেখানে হ্যাকাররা আমাদের কাছে ভুয়া ইমেইল, মেসেজ বা ওয়েবসাইট লিংক পাঠিয়ে থাকে, যা দেখতে হুবহু আসল মেসেজ বা ওয়েবসাইটের মত মনে হবে, আর সেগুলোতে, আমরা যদি ভুল করে আমাদের পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বর বা ব্যাংক ডিটেলস সেখানে দিয়ে দেই, তবে হ্যাকাররা সহজেই আমাদের একাউন্ট হ্যাক করতে সক্ষম হয়।
২/ মালওয়্যার (Malware), যা একটি ক্ষতিকারক ভাইরাস, সফটওয়্যার যা আমাদের কম্পিউটারে প্রবেশ করে তথ্য চুরি করে নিতে সক্ষম হয়।
৩/ র্যানসমওয়্যার (Ransomware), এটাও এমন একটি ভাইরাস যা কম্পিউটারের ডাটা এনক্রিপ্ট করে দেয় এবং হ্যাকাররা মুক্তিপণের (ransom) বিনিময়ে ডাটা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করে থাকে।
৪/ ব্রুট ফোর্স অ্যাটাক (Brute Force Attack), এই পদ্ধতিতে হ্যাকাররা এলোমেলো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে একাউন্টে প্রবেশ করার চেষ্টা করে থাকে, পরবর্তীতে তারা চেষ্টার ফলে সফলও হয়ে থাকে।
যেভাবে সাইবার আক্রমণ থেকে, আমাদের নিরাপদে থাকতে হবে,
১/ সবসময় শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যাতে ছোট হাতের, বড় হাতের, সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্ন (@, #, !) থাকে ইত্যাদি, আর সেই সাথে, একই পাসওয়ার্ড একাধিক জায়গায় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন এবং প্রতি ৩-৬ মাস পর পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নিন।
২/ টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু রাখুন, এটা ব্যবহারের মাধ্যমে হ্যাকারদের হাত থেকে, আপনার একাউন্টকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।
৩/ যদি কোনো অচেনা ইমেইল বা মেসেজ পান, যেখানে কোনো লিংক দেওয়া থাকে, সন্দেহজনক হলে সেটাতে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
৪/ কম্পিউটারে ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস এবং ফায়ারওয়াল ব্যবহার করুন, যাতে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে না পারে।
৫/ পাবলিক WiFi-তে সংযুক্ত হলে, VPN ব্যবহার করুন এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
যেভাবে সাইবার সিকিউরিটি শিখা সম্ভব, আপনি চাইলে ঘরে বসেই সাইবার সিকিউরিটি শিখতে পারেন। নিচের কিছু বিষয় শিখলে আপনি সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন,
১/ বেসিক সাইবার সিকিউরিটি ধারণা নিন বিস্তারিত এর সম্পর্কে জানুন।
২/ পাসওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট করুন।
৩/ এথিক্যাল হ্যাকিং ও পেনিট্রেশন টেস্টিং কিভাবে কাজ করে সম্পর্কেও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন।
৪/ ওয়েব সিকিউরিটি ও নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি, এই বিষয়গুলো নিয়ে, রিসার্চ শুরু করুন।
৫/ কোর্স ও ট্রেনিং করতে আপনি, Udemy, Coursera, Youtube, এগুলো থেকে কোর্স করে আপনি সাইবার সিকিউরিটিতে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করুন।
আমার সর্বশেষ কথা হচ্ছে,
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সাইবার সিকিউরিটি জানা অত্যন্ত জরুরি কারণ, এটি শুধু হ্যাকারদের হাত থেকে আমাদের তথ্য রক্ষা করে না, বরং আমাদের অর্থ, ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে, তাই সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে শিখুন, অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন এবং নিজের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন কে নিরাপদে রাখুন।
নিজেকে সচেতন রাখুন, সেই সাথে, সাইবার অপরাধীদের থেকে নিরাপদ থাকুন।
Have a Nice Day 😊
Tags
TechTips & Solution